Ad Code

Responsive Advertisement

Ticker

6/recent/ticker-posts

দৌড়--- কলমে- শিবাজী চ্যাটার্জী

  


দৌড়

 

ছুটছে অমিয়।  ছুটছে তবে খুব জোরে নয়।  বেশ একটা ছন্দোবদ্ধো গতিতে।  এবড়োখেবড়ো পাহাড়ী রাস্তা।  চড়াই উৎরাই ভেঙে ছুটছে অমিয়।  পৌঁছাতে হবে চূড়ায়।  তবে সে একাই দৌড়াচ্ছে না।  তার ছোটবেলার বন্ধু তরুন ও দৌড়াচ্ছে তার সাথে।  

  

অমিয় আর তরুন ছোটবেলা থেকেই হরিহর আত্মা।  ছোটবেলা থেকে বন্ধুত্বের পাশাপাশি তাদের মধ্যে কমন জিনিস হলো যে দুজনেই খেলাধূলা ভালোবাসে।  বিশেষ করে দৌড় দুজনেরই খুব প্রিয়।  তবে ১০০ মিটার বা ২০০ মিটার নয়।  দুজনেরই পছন্দ হলো লং ডিসট্যান্স রান বা ম্যারাথন।  অনেক প্রতিযোগিতায় দুজনে অংশগ্রহণ করেছে।  জিতেছে বেশীরভাগ জায়গাতেই।  তবে প্রতিটি প্রতিযোগিতায় আর একটা কমন ব্যাপার ছিল।  তা হল তরুন ফার্স্ট আর অমিয় সেকেন্ড।

 

কিন্তু এটা নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে কোনদিনও কোন সমস্যা তৈরী হয়নি।  অমিয় জানে তরুন তার থেকে অনেক ভালো অ্যাথলিট। তাই এই সেকেন্ড হওয়ার ব্যাপারটা সে স্পোর্টিংলি নেয়।  দৌড়টা তাদের দুজনের কাছেই একটা নেশার মত হয়ে গেছে এখন।  তাই অফিস থেকে দুদিনের ছুটি ম্যানেজ করে অমিয় আর তরুন যখন এই পাহাড়ি এলাকায় বেড়াতে এল তখন তরুনই প্রস্তাব দিল-অমিয় কাল ভোরে উঠেই শুরু করব বুঝলি।

- কি শুরু করবি?

- দৌড়।  

- অ্যাঁ, এখানে? 

- ইয়েস এখানে। আমাদের হোটেল থেকে বেরিয়ে রাস্তাটা সোজা গিয়ে দুভাগ হয়েছে দেখেছিস তো?

- হ্যাঁ দেখেছি।  

- বাঁদিকের রাস্তাটা ধরে এগোলে সোজা গিয়ে উঠবি ওই ছোট্ট পাহাড়টায়। অবশ্য ওটাকে পাহাড় না বলে টিলা বললেও পারিস।

- বুঝলাম। তা আমাদের দৌড় শুরু হবে কোথা থেকে?

- যেখানে রাস্তাটা ভাগ হয়েছে ওই মোড় থেকে।  

- ওকে ডান।

- কিন্তু একটা মুশকিল আছে।  

- আবার কি মুশকিল! 

- আরে বাবা দৌড়াব তো আমরা দুজন। আর তো কেও নেই। যে জিতবে সে প্রাইজ কি পাবে আর কে দেবে সেটা?

তরুন এর শেষ প্রশ্ন শুনে হোটেল রুম এর সোফায় গা টা এলিয়ে দিয়ে অমিয় বলে- সেটা আমাদেরি ভেবে ঠিক করতে হবে।  আমার মতে যে হারবে সে নয় অন্যজন কে একটা ট্রিট দিয়ে দেবে।

প্রস্তাবটা খুব একটা মনঃপুত হলো না তরুন এর।

- না রে, সে খুব সিম্পল ব্যাপার হবে। অন্য কিছু ভাব।

- তাহলে তুই বল।

- উমমম্ শোন, যে জিতবে সে অন্যজনের থেকে যা ইচ্ছে চেয়ে নিতে পারবে।

- ওকে ডান ইয়ার।

- ভেবে বলছিস তো? জিতলে কিন্তু তোর প্রানটাও চেয়ে নিতে পারি।

- আরে তেরে লিয়ে তো মেরা জান ভি কুরবান মেরে ইয়ার।  

সশব্দে হেসে ওঠে তরুন অমিয়র ফিল্মি কায়দায় কথা বলার ধরন দেখে।

 

 

দৌড়াতে দৌড়াতে কালকের হোটেল রুম এর কথাগুলো ভেবে হেসে ফেলল অমিয়।  সত্যি তরুনটা ছেলেমানুষই রয়ে গেল। কিন্তু গেল কোথায় তরুন? একটু আগেও অমিয়র থেকে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও তাকে দেখতে পাচ্ছিল অমিয়। রাস্তাটা মাঝেমাঝেই বাঁক নিয়ে পাহাড়টার দিকে উঠেছে।  দৌড়ের গতি একটু বাড়াল অমিয়। কতটা এগিয়ে গেছে তরুন? বলা যায় না জিতে গেলে যেরকম খ্যাপাটে তাতে অমিয়র পিতৃদত্ত প্রান নিয়ে টানাটানি পড়ে যেতে পারে।

 

আরো কিছুটা এগিয়ে তরুন কে দেখতে পেল অমিয়। অমিয়র থেকে প্রায় ২০০ গজ এগিয়ে রয়েছে।  অমিয় আন্দাজ করে দেখল যে গতিতে তরুন দৌড়াচ্ছে তাতে আরও ১০ মিনিট লাগবে তরুন এর ওই টিলার উপরে উঠতে।  অমিয় হাতের ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে মনস্থির করল যে ৫ থেকে ৬ মিনিটে এই দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে। এর বেশী সময় লাগলে সে আবার হেরে যাবে তরুন এর কাছে। এইবার নিজের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করে দৌড়াতে লাগল অমিয়। কিন্তু তরুন ও পিছনে মাথা ঘুরিয়ে দেখে নিয়েছিল অমিয়র অগ্রগমন। তাই সঠিক সময়ে সেও গতি বাড়াল আর বরাবরের মতো সে আগে পৌঁছালো টিলার মাথায়।

হাঁপাতে হাঁপাতে অমিয় ঠিক এক মিনিট পরেই পৌঁছালো তরুন এর পাশে। অবাক হয়ে দেখল যে জিতে উচ্ছ্বাস করার বদলে তরুন হাঁ করে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। তার দৃষ্টি অনুসরণ করে অমিয় ও তাকালো সামনে।

 

ওরা দৌড় শুরু করেছিল বেশ ভোরে।  তখন ভোরের আলো ফুটলেও সূর্যদেব এর ফোটার কোন লক্ষন ছিল না। এই মুহূর্তে সূর্যদোয় হতে চলেছে।  পূবের আকাশ সিঁদুরের মতো লাল হয়ে উঠেছে। অপূর্ব তার শোভা ছড়িয়ে পড়েছে টিলার চারপাশে। কিন্তু তাদের দৃষ্টি সেই শোভাতে আটকে ছিল না। টিলার একেবারে ধারে একজন দাঁড়িয়ে ফটাফট তার ক্যামেরার লেন্সে এই মুহূর্তটাকে ক্যাপচার করছিল। ক্যামেরা হাতে সেই নবাগতা কে দেখে দুই বন্ধুই ভাষা হারিয়ে ফেলেছিল।

তার কারনও ছিল অবশ্য।  মেয়েটি এককথায় অপূর্ব।  পরনে সাদা টাইট টি-শার্ট আর ডেনিম ব্লু জিন্স। পুরুষ্টু দুটি ঠোঁট যে কোন পুরুষের অমোঘ মৃত্যুবান। ভরাট উন্নত দুটি স্তন টি- শার্ট এর বেষ্টনী ভেদ করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।  তানপুরার খোলের মত উঁচু নিতম্ব চোখে যেন নেশা ধরায়। গমরঙা ত্বক সূর্যের গোলাপী আভায় উদ্ভাসিত।  

 

তাদের থেকে হাত দশেক দূরে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিল মেয়েটি। এবার ঘুরে তাকালো দুজনের দিকে। ক্যামেরাটা কেসবন্দী করতে করতে এগিয়ে এল তাদের দিকে। কাছে এসে সহজ গলায় বলল- হাই, মাইসেল্ফ বিদিশা।

 

দুদিনের জায়গায় তিনদিন হয়ে গেল কিন্তু অমিয় ও তরুন এখনও ছুটির মেজাজ থেকে বেরোতে পারল না। কোন একটা গানে আছে "নারী চরিত্র বেজায় জটিল,  কিছুই বুঝতে পারবে না"...আর যদি বিদিশার মতো আধুনিক দূর্জয় নারী চরিত্র হয় তাহলে তো সব হিসাব বোঝাবুঝির বাইরে চলে যায়।

টিলার উপরের ওই ক্ষনিক আলাপ - বিদিশার সাথে অমিয় ও তরুনের...পর্যবসিত হয়েছে গভীর বন্ধুত্বে। গভীরতা বেশী হয়েছে তরুনের সাথে।  আলাপ হবার দিনেই বিদিশা তার লাগেজ নিয়ে নিজের হোটেল ছেড়ে তরুনদের হোটেলে চলে আসে এবং তাদের পাশের রুমটা বুক করে। তারপর গল্প, আড্ডা, একসাথে ঘোরা...কোথাদিয়ে যে সময়টা কেটে গেল,  তিনজনের কেউ বুঝতেই পারলো না। এরিমধ্যে তরুন আর বিদিশা যথেষ্ট কাছাকাছি চলে এসেছে।  আধুনিক যুগের শর্ত মেনে বিদিশা আর তরুন বিদিশার রুমে সহবাস যাপন করেছে।

 

অমিয়র সাথেও বিদিশার খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে।  যদিও বিদিশার সাথে তরুনের এত তাড়াতাড়ি এতটা ঘনিষ্ট হওয়াটা অমিয়র কাছে একটু অস্বস্তিকর ছিল। তৃতীয়দিন যখন অমিয় তরুনকে ফেরার কথা বলল তখন তরুন সরোষে প্রতিবাদ জানাল।

- তুই কি পাগল অমিয়? এখন কোথায় ফিরব?

- মানে? কলকাতায় ফিরব আবার কি! অফিসের ছুটি শেষ সেই খেয়াল আছে না নেই?

- চিল ইয়ার। এখানে অফিস অফিস করিস না তো। অফিস তো নরক আর স্বর্গ হচ্ছে এটা।

- আর স্বর্গের অপ্সরা নিশ্চয়ই বিদিশা।

- তোর হিংসে হচ্ছে নাকি?

- তুই জানিস তরুন যে হিংসে জিনিসটা আমার নেই। কিন্তু দুদিনের মধ্যে ওই অপ্সরা তোকে যে এতটা কব্জা করেছে সেটা বুঝিনি।  

- উফ্, ও সত্যিই অপ্সরা। আমায় পাগল করে দিয়েছে রে। বিছানায় ওর মুভমেন্ট সুপার...

- ব্যাস ব্যাস। আমার তোদের বিছানার কীর্তি শোনার কোন ইচ্ছে নেই। কাল সকালে আমি ফিরব। তুই আসছিস তো? 

- সার্টেনলি নট ইয়ার। বিদিশার এখনো এখানে ফটো তোলা বাকি। তাছাড়া আমরা আদিবাসী গ্রামে গিয়ে এনজয় করব...অনেক প্ল্যান।

- ওক্কে বস। তুমি থাকো বাট আমায় ফিরতে হবে।

- সিরিয়াসলি তুই চলে যাবি কাল?

- নয়তো কি? চাকরীটা কি খোয়াব নাকি এই বাজারে? 

- বেশ, তুই যা। বস কে বলবি যে আমার ডেঙ্গু হয়েছে। সাতদিনের আগে তো আসতে পারবো না অফিসে।  

অমিয় কিছুক্ষণ অপলক তাকিয়ে রইল তরুনের দিকে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চুপচাপ নিজের লাগেজ গোছানোয় মন দিল।

 

তরুন হয়তো আন্দাজ করে থাকবে যে এইভাবে একসাথে এসে একা ফিরে যাওয়াটা অমিয়কে কষ্ট দিয়েছে।  তাই একপ্রকার জোর করেই সেইদিন ডিনারের পর তরুন একরকম জোর করেই অমিয়কে বিদিশার ঘরে নিয়ে এল।

- শোন বিদিশা প্রস্তাব দিয়েছে যে আজ রাতে আমরা কেউ শোব না। সারারাত আড্ডা আনন্দ নাচ আর কিঞ্চিৎ মদ্যপান।

বিদিশা- ইয়েস অমিয়। কাল তুমি চলে যাবে। তার আগে আজকের রাত আমরা মেমোরেবল করে রাখব। নাচব গাইব খুব মজা করব।

অমিয়- সেতো ঠিক আছে কিন্তু গাইবে কে আর নাচবে কে?

বিদিশা- কেন? আমি নাচব। তুমি নাচবে। তরুন নাচবে। চলো লেটস প্লে দ্য মিউজিক।  

তরুন- তার চেয়ে বিদিশা, সবচেয়ে ভাল হয় যে তুমি নাচবে আর আমরা পুরোনো দিনের রাজা বাদশার মতো আয়েশ করে বসে তোমার নাচ উপভোগ করব। কি অমিয় ভুল বললাম বল?

অমিয়- মন্দ হবে না তবে বিদিশা যদি নৃত্য পটীয়সী না হয় তাহলে ঠিক উপভোগ করা হবেনা।

এইকথায় তরুন হো হো করে হেসে ওঠায় বিদিশা নকল রাগের ভঙ্গিতে ওদের দিকে তাকাল।

- বটে!  এতবড় ইনসাল্ট আমার...বেশ নাচব আমি। দেখিয়ে দেব যে বিদিশা রায় কোন কলাতেই কম যায়না।

 

সত্যিই দুই বন্ধু দেখল যে বিদিশা নাচে উর্বশী...না একটু বোধহয় ভুল হয়ে গেল। উর্বশীর নাচ তো কল্পনায় দেখা যায় কিন্তু বিদিশার নাচ দেখে অমিয় ও তরুন এর বাক্যস্ফূর্তি হলো না। পারফেক্ট ওয়েস্টার্ন প্যাটার্ন এর ড্যান্স, বিদিশার শরীরি বিভঙ্গে হাঁ হয়ে গেল অমিয় ও তরুন।  তবে কিছু সময় পরেই অমিয় দেখল যে বিদিশা যেন তরুন কে উত্তেজিত করার জন্যই বিভিন্ন শরীরি ইশারা করছে আর সেই ইশারায় প্রশ্রয় পেয়ে তরুন উঠে গিয়ে বিদিশার শরীরের বিভিন্ন অংশে দৃষ্টিকটু ভাবে স্পর্শ করতে লাগল। অমিয় বুঝতে পারলো যে প্রবল কামজ্বরে আক্রান্ত দুজনেই। মাথা নীচু করে উঠে সে নিজের রুমের দিকে এগোতে যাবে এমন সময় একটা দৃশ্য দেখে অমিয়র সারা শরীরে একটা শিহরন খেলে গেল।  

 

অমিয় দেখল যে বিদিশা ও তরুন দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে নাচছে আর তারই মধ্যে বিদিশার পায়ের গোড়ালি ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে যাচ্ছে অথচ বাকি শরীরটা সোজাই থাকছে।  

এক পলক এই দৃশ্য দেখেই অমিয় আতঙ্কে চিৎকার করে উঠল। বিদিশা ও তরুন তার চিৎকারে চমকে গিয়ে নাচ বন্ধ করে অমিয়র কাছে এল।

- কি হয়েছে ডিয়ার?  এনিথিং রং?

বিদিশার প্রশ্নে অমিয় কোন জবাব দিতে পারল না। ত্রাসের সাথে একবার বিদিশার মুখের দিকে আর একবার বিদিশার পায়ের দিকে তাকাতে লাগল।

তরুন- কিরে কি হলো তোর?

বিদিশা- আঃ ডার্লিং,  হি মাস্ট বি ফিলিং ড্রাঙ্কড... তাই না অমিয়? 

তরুণ - তুই যা। রুমে গিয়ে রেস্ট নে। আমি পরে আসছি।  

একটা ঘোরের মধ্যে অমিয় উঠে নিজেদের রুমে ফিরে এল। মনের মধ্যে একটা অস্বস্তি নিয়ে... যা দেখল সেটা কি সত্যি না নেশার ঘোর!

 

পরদিন সকালে হোটেল থেকে বেরোনোর সময় বিদিশা ও তরুন কাউকেই দেখতে পেল না অমিয়। বিদিশার রুমে দুজনে ঘুমোচ্ছে ভেবে আর বিরক্ত করল না অমিয়। গাড়ি করে কলকাতায় ফেরার সময় সারাটা রাস্তা আনমনা হয়ে রইল অমিয়।  তরুন...তার ছোটবেলার বন্ধুকে একলা ফেলে চলে এসে কি ঠিক করল সে?  ফ্রী লান্স ফটোগ্রাফার বিদিশার পরিচয় আসলে কি? কাল রাতে যেটা সে দেখল তা কি সত্যি?  নাঃ আর ভাবতে পারে না অমিয়। গাড়ির পিছনের সীটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে সে।

   

কলকাতায় পৌঁছে অফিসে কাজে যোগ দিলেও তরুন ও বিদিশার ব্যাপারটা মন থেকে মুছে দিতে পারল না অমিয়। কলকাতায় ফেরার দুদিন পরের ঘটনা। অফিস থেকে বাড়ি ফিরে অমিয় নিজের ঘরে চুপচাপ শুয়ে ছিল। হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠতে সে তাকাল স্ক্রীনের দিকে। তরুনের ফোন। ফেরার পর থেকে তরুণ ও বিদিশার মোবাইলে যতবার ফোন করেছে অমিয়, ততবারই সুইচড অফ পেয়েছে।  তাই এখন তরুনের ফোন দেখে সে ঝট করে উঠে ফোনটা রিসিভ করল।

- হ্যালো, তরুন, কি ব্যাপার রে? ফোনে তো পাচ্ছিলাম না তোকে! 

তরুনের আওয়াজ যেন বহুদূর থেকে অমিয়র কানে ভেসে এল।

- হ্যালো অমিয়? 

- হ্যাঁ বল।

- টিলাপাহাড়ের দৌড়ে জেতার প্রাইজটা তোর কাছে পাওনা আছে মনে আছে তো?

- হ্যাঁ সে তো মনে আছে কিন্তু... 

- যা ইচ্ছে চাইতে পারি তো?

- সে তো পারিসই কিন্তু আমি তো ঠিক...

- তোর জীবনটা আমি প্রাইজ হিসাবে চাইছি।  

- আমি তো কিছুই... 

- বোঝার দরকার নেই। যদি আমায় বাঁচাতে চাস তো কালকেই এখানে চলে আয়।

- কি বলছিস কি তরুন?

- বেশী কথা বলার সময় নেই আমার। এলেই সব বুঝতে পারবি। রাখছি।

কেটে গেল ফোন। অমিয়র মনে হল তরুনের শেষের দিকের কথাগুলো যেন হাহাকারের মতো শোনাল। মনটা চঞ্চল হয়ে উঠল তার। সারারাত বিছানায় শুয়ে ছটফট করল সে। কি বলতে চাইল তরুন! সত্যিই তার প্রান চায় ও? কিরকম বিপদে পড়েছে ও যে জীবন মরনের প্রশ্ন আসছে। নাঃ যেতেই হবে তাকে তরুনের কাছে।

 

পরদিন সকালেই রওনা দিল অমিয়।  গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় বেলা ১২টা বেজে গেল। যে হোটেলে তারা উঠেছিল সেখানে এসে জানতে পারলো যে তরুন ও বিদিশা দুদিন আগেই সেই হোটেল ছেড়ে চলে গেছে।  কোথায় গেছে সেটা অবশ্য হোটেল ম্যানেজার বলতে পারলো না। হোটেলে নিজের লাগেজ রেখে বাইরে এল অমিয়। কি করবে এখন কিছুই বুঝতে পারছে না। কোথায় খুঁজবে তরুনকে! 

অমিয় ঠিক করল এখানকার সব হোটেল আর লজে সে অনুসন্ধান করবে।

হোটেলের বাইরে এসে অমিয় চিন্তা করতে লাগল ঠিক কোথা থেকে শুরু করে যায়। এমন সময় সাইকেল নিয়ে তার সামনে এসে দাঁড়াল একজন ঘোর কৃষ্নবর্ণ লোক। ব্রেক কষে সাইকেল থামিয়ে সে বলল- আপনি কি অমিয় বাবু?

সন্দেহজনক দৃষ্টিতে লোকটার দিকে তাকিয়ে অমিয় বলল-হ্যাঁ, আপনি কে?

- আপনার নামে একটা চিঠি আছে। এই নিন।

চিঠিটা নিয়ে দ্রুত কাগজটা পড়তে শুরু করে অমিয়। তরুনের চিঠি,  তরুন তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লোকটির সাথে যেতে বলেছে।  চিঠিটা পড়া শেষ করে সেটি ভাঁজ করে পকেটে রেখে অমিয় লোকটিকে বলল- কোথায় যেতে হবে?

লোকটি অমিয়কে সাইকেলের পিছনে ক্যারিয়ারে বসতে ইশারা করল। বিনা বাক্যব্যায়ে অমিয় উঠে বসল সাইকেলে। মাথায় তখন একটাই চিন্তা যে তরুন কি অবস্থায় আছে।

 

অমিয় লক্ষ্য করল যে লোকটি তাকে টিলাপাহাড়ের রাস্তার যে মোড় সেই মোড় থেকে আদিবাসী গ্রামের রাস্তা ধরল।

সাইকেলে যেতে অমিয় লোকটিকে তরুন ও বিদিশার ব্যাপারে জিগ্যেস করে কোন উত্তর পেল না। শুধু জানতে পারলো যে লোকটির নাম মাধব। আদিবাসী গ্রামের কিছুটা আগে মাধব বাঁ দিকের একটা অপরিসর জনবিরল রাস্তা ধরল। অমিয় লক্ষ্য করল যে রাস্তাটি অতীব নির্জন। চারদিকে শাল পলাশ মহুয়ার জঙ্গল আর মাঝখান দিয়ে সরু একফালি রাস্তা। বড় বড় গাছ থাকার কারনে দিনের বেলাতেও রাস্তায় আলোর অপ্রতুলতা রয়েছে।  মিনিট পনেরো ওই রাস্তায় সাইকেল চালানোর পর মাধব দাঁড়াল। অমিয় নেমে মাধব কে বলল- এখানে নামালে কেন?

উত্তরে মাধব ডান হাত তুলে কিছুটা দূরে অমিয়র দৃষ্টি আকর্ষন করল। তার হাতের দৃষ্টি অনুসরন করে অমিয় দেখল যে একটা কাঠের একতলা বাড়ি দেখা যাচ্ছে।  এইরকম নির্জন জঙ্গলাকীর্ন জায়গায় এরকম বাড়ি কোথা থেকে এল আর তরুন এই বাড়িতে কি করছে... এই সব ভাবতে ভাবতে অন্যমনস্ক অমিয়র চটকা ভাঙল একজন মহিলার তীক্ষ্ণ আর্তনাদে। চিৎকারটা যে ওই বাড়ি থেকেই এসছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। হঠাৎ পাতার খসখস শব্দে অমিয় তাকিয়ে দেখল যে মাধব দ্রুতবেগে সাইকেল চালিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।

মাধবের পালিয়ে যাওয়া দেখতে দেখতেই অমিয় স্থির করে ফেলল যে ওই বাড়িতে সে যাবে। দ্রুতপদে বাড়ির দিকে এগোতে লাগল বাড়ির কাছাকাছি আসতেই দরজাটা খুলে গেল আর অমিয়কে অবাক করে দিয়ে ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল বিদিশা।

অমিয়কে দেখেই বিদিশা দৌড়ে অমিয়র কাছে এসে তার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল।

- আমাকে বাঁচাও অমিয়। আমাকে বাঁচাও।

- কি হয়েছে বিদিশা? তরুন কোথায়? 

অমিয়কে আরও আঁকড়ে ধরে বিদিশা বাড়ির ভিতর দিকে আঙুল দেখালো। ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকা বিদিশাকে নিজের শরীর থেকে আলাদা করে অমিয় এগিয়ে গেল বাড়ির ভিতরে।

ভিতরে ঢুকে অমিয় প্রত্যেকটি ঘরের আনাচেকানাচে দেখল। কিন্তু কোথায় তরুন! ইতিমধ্যে বিদিশা ঘরের মধ্যে এসছে।

- তরুন কোথায় বিদিশা?

- এইঘরেই ছিল।

- ছিল তো গেল কোথায়? উবে গেল?

- আমি জানিনা, আমি জানিনা। তোমার বন্ধু উন্মাদ হয়ে গেছে।  

- সে তো তোমার সাথে আলাপ হবার পরমুহূর্ত থেকেই দেখছি।

একটু যেন রূঢ় শোনাল অমিয়র গলা তার নিজের কাছেই। অমিয় দেখল যে বিদিশা এখনও ভয়ে কাঁটা হয়ে আছে। অমিয়র কথা শুনে বিদিশা এবার কেঁদেই ফেলল।

- তুমি আমায় দায়ী করছ অমিয়?  আমার কি দোষ বল! আমি তো শুধু ওকে...

আর বলতে পারে না বিদিশা।

অমিয়র এবার একটু খারাপ লাগে। পকেট থেকে সিগারেট বার করে জ্বালায় সে এবং ভাল করে বিদিশাকে লক্ষ্য করে। আজ যেন বিদিশাকে আরও সুন্দরী লাগছে।  কালো স্লিভলেস একটা কুর্তী আর জিন্স পরা। মাথার চুলগুলো খোলা।

- শান্ত হও বিদিশা। আমি শুধু আমার বন্ধুর ব্যাপারে কনসার্ন।

- তরুন ই তো তোমার বন্ধু। আমি তো কেও নই। দ্যাখো তোমার উন্মাদ বন্ধু কি করেছে আমায়।

এগিয়ে আসে বিদিশা। দুইহাত সামনে বাড়িয়ে দেখায়। চমকে ওঠে অমিয়। দুটোহাতেই অনেক জায়গায় নখ দিয়ে আঁচড়ানোর দাগ।

অবাক হয়ে অমিয় বলে- কিন্তু তরুন এরকম করছে কেন? আমায় বল বিদিশা। সব খুলে বল।

ইতিমধ্যে বাইরে যে ঘন কালো মেঘে অন্ধকার ছেয়ে এসেছে সেটা ওরা বুঝতে পারেনি। মেঘের গুড়গুড় শব্দে বিদিশা বাইরে তাকায় এবং দরজাটা বন্ধ করে ঘরের বাল্ব জ্বেলে দেয়। কম পাওয়ারের বাল্বের আলোয় ঘর এবং বিদিশা দুটোকেই রহস্যময়ী লাগে অমিয়র।

 

আগের থেকে বেশ কিছুটা সহজ হয়েছে বিদিশা। অমিয় কলকাতায় চলে যাবার পর থেকে সব ঘটনা জানায় সে।

অমিয় চলে যাবার পর বিদিশা ও তরুন ওই হোটেলে আর একদিন ছিল। এরপর তারা হোটেল ছেড়ে আদিবাসী দের গ্রামে যায়। সেখানে মাধব এর সাথে তাদের আলাপ হয়। মাধব এই কটেজ টার কেয়ারটেকার।  কলকাতার এক অবাঙালী ভদ্রলোক এই কটেজের মালিক। বছরে একবার তিনি এখানে আসেন। বাকি সময়টা মাধব কটেজটা দেখাশোনা করে। মাধবকে রাজী করিয়ে ওরা এই কটেজটা ভাড়া নিয়েছে কিন্তু এই কটেজে আসার পরই তরুনের রূপ বদলে গেছে।  সারাদিন তার পাত্তা থাকেনা আর রাতে এসে সে বিদিশার উপর অত্যাচার চালায়। পাগলের মতো আচরন করে। আঁচড়ে কামড়ে বিদিশা কে যন্ত্রণা দেয়।

 

এইকথাগুলো বলে বিদিশা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। ইতিমধ্যেই বাইরে মেঘের গর্জনের সাথে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।  বিদিশা অমিয়র একদম কাছে সরে আসে। তাকে অনুরোধ করে এরকম অবস্থায় একা ফেলে চলে না যাওয়ার জন্য।  অমিয় তাকে আশ্বাস দেয় যে সে থাকবে।

- কিন্তু তরুনের এইরকম আচরণের ব্যাখাও আমায় খুঁজে বার করতে হবে। বিপদে পড়েছে বলে ফোন করে আমায় ডাকল আর নিজে বেপাত্তা।  

বিদিশা একটু চমকায় অমিয়র কথা শুনে কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বলে- ও তোমায় ডেকেছে? 

- হ্যাঁ।

- তাহলে দ্যাখো ঠিক আসবে। আচ্ছা তুমি বসো। আমি দুজনের জন্য চা করে আনি। এখানে সব ব্যবস্থা আছে।

বিদিশা কিচেনে গেলে অমিয় গভীর চিন্তায় ডুবে গেল। বিদিশার কথাগুলো ঠিক মন থেকে মেনে নিতে পারছে না অমিয়।  ফোনে তরুনের গলার করুন আর্তি এখনও অমিয়র কানে লেগে আছে।  বিদিশার কথায় তার ভাবনায় ছেদ পড়ল।

- সত্যি অমিয় তুমি না এলে আমি যে কি করতাম। ওই উন্মাদের হাত থেকে কিভাবে পালাব বুঝতে পারছি না।

বিদিশার হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দেয় অমিয়। বাইরে বৃষ্টি বেশ তেড়েই নেমেছে।  ঘন ঘন যেভাবে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে তাতে দূর্যোগ ভালই হবে মনে হচ্ছে।  বিদিশা একদম ঘন হয়ে বসেছে অমিয়র পাশে। তার দিকে তাকাতেই  অমিয় দেখতে পেল বিদিশার নিটোল স্তনের গভীর বিভাজিকা। চোখটা আটকে গেল তার যেন। সত্যি তরুন কিছু ভুল বলেনি। চোখ ঝলসানো রূপ মেয়েটির। এমন একটা সন্মোহিনী আর্কষন ক্ষমতা আছে যে এই কঠিন সময়েও অমিয়র মনটাকে চঞ্চল করে তুলেছে।  বিদিশাও অমিয়র চাহনি লক্ষ্য করেছে কিন্তু নিজেকে সামলানোর পরিবর্তে সে আরও সরে এল অমিয়র কাছে।  বাল্বের স্বল্প আলো, বাইরে অবিরাম বৃষ্টি,  বিদ্যুত বর্ষন...প্রকৃতি যেন এক ভয়ংকর কোন খেলায় মেতে উঠতে চাইছে।  বিদিশার চোখের আমন্ত্রণ অমিয়র মস্তিষ্কে প্রভাব বিস্তার করল। অমিয়কে জড়িয়ে ধরে বিদিশা গালে ঠোঁটে কানে চুম্বন করা শুরু করল। নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলল অমিয়। বিদিশাকে জাপটে ধরে তার শরীরে যেন ডুবে যেতে চাইল সে। বিদিশার শরীরের সমস্ত গোপন জায়গায় অমিয়র ঠোঁট স্পর্শ করতে লাগল। ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়তে লাগলো দুজনার। এরিমধ্যে নিজেকে আবরন মুক্ত করেছে বিদিশা। অমিয় কেও সাহায্য করল বস্ত্রের বাঁধন থেকে মুক্ত হতে। দুটি শরীর তৃপ্তির চরম আনন্দে ডুবে যেতে লাগল।

 

ঠিক সেই মুহুর্তে দড়াম করে খুলে গেল দরজা। বৃষ্টির একরাশ ছাঁট এসে ঢুকল ভিতরে।  চমকে উঠে নিজেদের আলিঙ্গন মুক্ত করল বিদিশা ও অমিয়। বিস্মিত চোখে দেখল যে দরজায় এক ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে।  ঘরের বাল্বটা নিভে গেছে দরজা খোলার সাথে সাথে।  

চেঁচিয়ে উঠল অমিয়- কে? কে ওখানে? 

- কিরে অমিয় আমায় চিনতে পারছিস না?

অমিয় চমকে ওঠে তরুনের গলা শুনে।  এদিকে ভয়ে আতঙ্কে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে বিদিশা। মুখ ঢেকে চিৎকার করে ওঠে সে।

অমিয় পোশাক পরিধান করে বলে- তরুন ভিতরে আয়।

- যদি বাঁচতে চাস তো আমার কথা শোন। এখনি আমার পিছনে দৌড় শুরু কর। ওই টিলাপাহাড়ের চূড়োয় আর একবার উঠতে হবে তোকে। বেরিয়ে আয় ওর হাতের নাগাল থেকে।  

ভয়ংকর একটা বাজ পড়ার শব্দ হয় কাছেই কোথাও আর তার একঝলক আলোয় অমিয় দেখতে পায় তরুনকে। বিবর্ন সাদা একটা চেহারা নিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে তরুন। এদিকে নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়িয়েছে বিদিশা। তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল- খবরদার, আবার এসছো তুমি। চলে যাও এখান থেকে।  

হতবাক অমিয় দেখে যে রাগে আক্রোশে বিদিশার অপরুপ চেহারা যেন বিকৃত হয়ে যাচ্ছে।

দ্রুতপায়ে বিদিশার কাছে চলে আসে তরুন। অর্ন্তবাস পরা বিদিশার গলাটা টিপে ধরে সে।  মাটি থেকে একহাত শূন্যে তুলে ফেলে সে। ছটফট করতে থাকে বিদিশা। চোখ দুটো ঠেলে বেরিয়ে আসতে চায়। অমিয় চিৎকার করে বলে- কি করছিস তরুন? মেয়েটা মরে যাবে যে।

- কিচ্ছু হবে না ওর। কিন্ত তুই যা এখুনি পাহাড়েনইলে না নিজে বাঁচবি না আমায় বাঁচাতে পারবি। আমি এভাবে ওকে বেশীক্ষণ আটকে রাখতে পারবো না। যাআআআ...

তরুন এর চিৎকারে আর দাঁড়িয়ে থাকে না অমিয়। বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছুটতে থাকে টিলার দিকে।

 

টিলায় ওঠার রাস্তা ধরে দৌড়াতে থাকে অমিয়। বৃষ্টি পড়েই চলেছে অবিরাম।  অবিশ্রান্ত জলধারার মধ্যে দিয়ে অমিয় দৌড়াচ্ছে।  হঠাৎ দেখল পাশাপাশি দৌড়াচ্ছে তরুন। দৌড়াতে দৌড়াতে তরুন বলল- তোর মনে অনেক প্রশ্ন আমি জানি। শোন তাহলে ওই বিদিশা মেয়েটা হল কুহকিনী বা ডাকিনীও বলতে পারিস। একবার এখানে বেড়াতে এসে এখানের স্থানীয় যুবক রমেশ এর প্রেমে পড়ে সে। ওই টিলা পাহাড়ের উপরে এক বিকালে রমেশ ও বিদিশার উপরে স্থানীয় কিছু গুন্ডা হামলা করে। বিদিশাকে তারা ধর্ষন করে এবং রমেশকে মেরে ফেলে। বিদিশাকেও মেরে ফেলত কিন্তু ওই সময় মাধব ওখানে পৌঁছায় এবং গুন্ডাগুলো পালায়। বিদিশাকে উদ্ধার করে মাধব। আসলে মাধব হচ্ছে একজন তান্ত্রিক।  পিশাচসাধনা করে সে। বিদ্ধস্ত ধর্ষিতা বিদিশাকে সে কথা দেয় যে তার তন্ত্র শক্তি দিয়ে সে রমেশ কে বাঁচিয়ে তুলবে। তাই পুলিশকে কেউ কিছু জানায়না। টিলাপাহাড়ের পিছনে এক গুহায় রমেশ এর লাশ রেখে দেয় দুজনে। রমেশকে জ্যান্ত করতে গেলে তিনজন যুবককে বশ করতে হবে বিদিশাকে। শরীরী খেলায় মাতিয়ে বশ করতে হবে তাদের। তারপর মাধব এর কাছে নিয়ে আসতে হবে সেই তিনজনকে একসাথে।  তন্ত্র সাধনায় সেই তিনজনের হৃদপিণ্ড বার করে আগুনে পুরিয়ে রমেশ এর দেহে স্থাপন করলে রমেশ বাঁচবে এমনটাই বোঝায় মাধব বিদিশাকে।

এরপর বিদিশা মেতে ওঠে এই সাংঘাতিক খেলায়। আমার আগে আর একজন ছেলেকে ওরা বশ করে অজ্ঞান করে ওই গুহায় রেখে দিয়েছে।  আমাকেও রাখত কিন্তু আমার সাথে সঙ্গম এর সময় বিদিশার গলার একটা হার খুলে পড়ে যায় যেটা ওকে মাধব তান্ত্রিক দিয়েছিল। ওই হার গলায় থাকলে ওর অনেক শক্তি কিন্তু এখন ও সাধারন একটা মেয়ে।  

এই পর্যন্ত বলে তরুন তার পকেট থেকে একটা রুদ্রাক্ষের মালা বার করে দেখায় অমিয়কে।

- সবই বুঝলাম তরুন কিন্তু আমায় কি করতে হবে এখন আর তুই বা এতকিছু জানলি কি করে? 

- ওই হার গলা থেকে খুলে যাবার জন্য বিদিশা আমায় পুরোপুরি বশ করতে পারেনি। মাধব তান্ত্রিক এর তন্ত্র শক্তির বলে আমি এই এরিয়া থেকে বেরোতে পারছি না। যদি তুই এই হার নিয়ে গিয়ে রমেশ এর পচাগলা শবদেহের উপর ফেলে আগুন ধরিয়ে দিতে পারিস তাহলে মাধব আর বিদিশা দুজনেই ধ্বংস হবে।

- বেশ আমি তাই করব।

এইবলে অমিয় আরো জোরে দৌড়াতে থাকে। তরুন ও দৌড়াতে দৌড়াতে বলে- সাবধান অমিয়, এতক্ষণে বিদিশা মাধব কে সব জানিয়েছে।  ও নিশ্চয়ই ওর পিশাচ শক্তি নিয়ে বাধা দিতে আসবে। আর এই কাজটা তোকে সন্ধ্যার আগে করতে হবে। অমিয় একবার হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল যে সন্ধ্যা হতে আরও আধঘণ্টা বাকি আছে।  পাহাড়ের পাদদেশে এসে পৌঁছে অমিয় দেখল যে মাধব সেখানে দাঁড়িয়ে গনগনে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।  তরুন চিৎকার করে বলল- 

সাবধান অমিয়, ওর কাছে পিশাচশক্তি আছে।  

অমিয় দেখল যে মাধব এগিয়ে আসছে দ্রুত। সোজা পাহাড়ের উপরে উঠতে লাগল অমিয়। মাধব এর আগেই উঠে এল টিলার উপরে।  খুঁজে বার করল গুহাটা। রমেশের পচাগলা শবদেহের উপর হারটা ফেলতে গেল অমিয়। তখনই কানে এল বিদিশার মিষ্টি আওয়াজ- অ্যাই কি হচ্ছে কি?

চমকে তাকালো অমিয়। দেখল সেই কালো ড্রেস পরিহিত বিদিশাকে যার আর্কষনী শক্তি খুব কম পুরুষই এড়াতে পারে। হঠাৎ তরুনের আওয়াজ কানে এল অমিয়র।

- হারটা ফেলে লাশটা জ্বালিয়ে দে অমিয়। ও বিদিশা নয়। মাধবের পিশাচে পরিনত হয়েছে ও।

পরমুহূর্তেই অমিয় দেখল বিদিশার পরিবর্তিত রূপ। রাগ ও আক্রোশে বিকৃত চেহারা। চোখ দুটো ভাটার মত জ্বলছে।  হারটা এখন অমিয়র কাছে আছে বলে সে অমিয়কে কিছু করতে না পারলেও ঝাঁপিয়ে পড়ল তরুনের উপর। আর্তনাদ করে উঠল তরুন। অমিয় দেখল যে তরুনের বুকে নিজের দাঁত বসিয়ে দিয়েছে বিদিশা। ফুটো হয়ে গেছে  বুক। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে আর সেই রক্ত আকন্ঠ পান করছে বিদিশা। সেই অবস্থায় তরুন আর্তনাদ করে ওঠে -হার ও লাশটা জ্বালা অমিয়।

 

সম্বিত ফিরে পায় অমিয়। পচা লাশের উপর হারটা ফেলে দেশলাই বার করে সে। সেখানে পৌঁছে যাওয়া মাধব তখন চিৎকার করে উঠল বিদিশাকে লক্ষ্য করে- ওকে আটকাও। আগুন যেন না লাগাতে পারে।  

তরুনকে ছেড়ে অমিয়র দিকে তাকাল বিদিশা। শিউরে উঠল অমিয়।  বিদিশার মুখ রক্তে লাল। ঠোঁট থেকে ঝুলছে তরুনের বুক থেকে কামড়ে ছিঁড়ে নেওয়া একটুকরো মাংস। গা গুলিয়ে উঠল অমিয়র। গর্জন করে এগিয়ে এল বিদিশা।  ঠিক সেই মুহুর্তে অমিয় জ্বলন্ত দেশলাই কাঠি ফেলে দিল লাশের উপর। দাউদাউ করে জ্বলে উঠল লাশ আর সেইসাথে কানফাটা আর্তনাদ কানে এল অমিয়র। অবাক হয়ে দেখল যে লাশের সাথে সাথে বিদিশা ও মাধব দাউদাউ করে জ্বলছে।  কাঁচা মাংস পোড়ার গন্ধ সহ্য করতে না পেরে আহত তরুনকে নিয়ে টিলা থেকে নেমে এল অমিয়। পাহাড়ের পাদদেশে এসে বসল দুজনে। অমিয়র কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল তরুন।

- তুই পেরেছিস অমিয়। আমরা বেঁচে আছি।  

- হ্যাঁ কিন্তু তোর দৌড়ে জেতার প্রাইজ এর কি হবে? আমার প্রান চেয়েছিলি কিন্তু আমি তো মরিনি।

- নিজের জীবন তুচ্ছ করে আমার বিপদে তুই ঝাঁপিয়ে পড়েছিস ইয়ার। প্রাইজ আমি পেয়ে গেছি 

হেসে ফেলল অমিয়। জড়িয়ে ধরল তরুনকে। এখনও অনেক কাজ বাকি। তরুনকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে। তারপর সুস্থ করে কলকাতায় ফেরত নিয়ে যেতে হবে, অফিসে জয়েন করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি... 

 

 -----

 

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ