শিরোনাম-অপেক্ষা'তে /কলমে-নেহা কর্মকার

শিরোনাম-অপেক্ষা'তে 

কলমে-নেহা কর্মকার

আমি সান্ধ্য-বিকেলগুলো রোজ তার অপেক্ষা'তে কাটিয়েছি। খুব শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছি চেনা গলির মোড়ে। আমি তার দেওয়া অপেক্ষা'দের ভালোবেসেছি। তার সাথে জড়িয়ে থাকা কিছুটা মূহুর্তদেরও মনের ফ্রেমে বন্দী করেছি। তার চলে যাওয়ার পথ চেয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকেছি বহুক্ষণ। যতবার ওই গলির মোড়ে সে অদৃশ্য হত ততবার আরও বেশি করে চেয়েছি তার দেখা পেতে। বাড়ি ফেরার পথে ফেলে আসা রাস্তায় চেনা একজনের খোঁজে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছি বহুবার। 

তাকে একটু একটু করে নিজের অভ্যেস করে তুলেছি রোজ। মায়ায় জড়াব না ভেবেও তাকে আমার মস্তিষ্কে অনায়াসে বইতে দিয়েছি, শিরা-উপশিরায় ধমনীতে বিশ্রী ভাবে জড়িয়ে নিয়েছি, ভেতর ভেতর নিশ্চুপে জন্ম দিয়েছি এক তুমুল ঝড়ের। নিজেকে ভেসে যেতে দিয়েছি অনিশ্চয়তার অতল সমুদ্রে।

এই চিরকালের অনাকাঙ্ক্ষিত অভ্যাসের অসুখে আক্রান্ত হয়ে নত স্বীকার করেছি বারবার। যতবারই এই অভ্যেসে জড়িয়েছি ততবারই একটু একটু করে পুড়ে নিঃশেষিত হয়েছি রোজ। ক্ষত-বিক্ষত হয়েও সেই পুরনো অভ্যেসে ফিরে গেছি। এই অভ্যাসের বশেই যাকে পাবোনা তাকে খুব বেশি করে আঁকড়ে থেকেছি। তারপরে দিনশেষে ক্লান্ত হয়ে আঁধারে মুছেছি অযাচিত অশ্রুধারা, চাপা কষ্টে মুখ গুঁজেছি বালিশে। খুব অভিমানে চুপ করে গেছি বারবার। তারপরেও নির্লজ্জের মতো আবারও ফিরে গেছি ওই একই চেনা অভ্যেসে। 

এমন কোনো অভ্যেসকে উপেক্ষা করতে না পেরেই বোধহয় কবিগুরু লিখেছিলেন 

" গোপনে তোমারে সখা কত ভালোবাসি " কিংবা শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কথায়,

"সারা জীবন সন্ধ্যে-সকাল করেও ফাঁকি

কপাল আমার মন্দ তাতে সন্দেহ কি

প্রিয়কে পথ দিয়েও বুঝি দিলাম না

যাকে চেয়েছিলাম তারে পেলাম না "

___